মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪১ অপরাহ্ন

ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক অগ্নিশিখা পত্রিকা
ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক অগ্নিশিখা পত্রিকা এবং  অনলাইন ও ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া  এর জন্য সম্পূর্ণ  নতুনভাবে সারাদেশ থেকে জেলা, উপজেলা,বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সরকারি কলেজ,পলিটেকনিকে একযোগে সংবাদকর্মী আবশ্যক বিস্তারিত জানতে ০১৮১৬৩৯৩২২৩

বান্দরবান লামা-আলীকদমে সমতল যেন তামাক রাজ্য

মাসুদ পারভেজ বিভাগীয় ব্যুরো চীফ চট্রগ্রামঃ বান্দরবান পৌর শহর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে লামা উপজেলার অবস্থান। পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের সবচেয়ে বেশি সমতল ভূমি আছে এ উপজেলায়। পাশ দিয়ে মাতা মুহুরী নদী প্রবাহিত হওয়ায় চর এলাকা বেশ উর্বর। রবি-শস্য উৎপাদনের জন্য বেশ সুনামও ছিল এ এলাকার। তবে এখন যেদিকেই চোখ যায় তামাক ক্ষেত ছাড়া তেমন কিছুই যেন দেখা যায় না।

তামাক সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় এ উপজেলার অধিকাংশ ফসলি মাঠ হয়ে উঠছে বিষবৃক্ষ তামাকের ক্ষেত। ছাড় পাচ্ছে না বসত বাড়ির পতিত জমি, শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা নদীর চর। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লাগোয়া ফসলি ক্ষেতেও চলছে তামাক চাষ।

লামা-আলীকদম সড়কের পাশেই শিলেরতুয়া মার্মা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর লাগোয়া জমিতে বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রুমং মার্মার জমিতে করা হয়েছে তামাকে চাষ।

লামা উপজেলার সাবেক বিলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথের দুপাশে ও বিদ্যালয় ভবনের তিন পাশেই করা হয়েছে তামাকের চাষ। লামার মুখ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথের দুপাশে ও লামা কলেজের পেছনের জমিগুলোতে চাষ হয়েছে তামাকের। ফলে তামাকের গন্ধ চারদিক ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থাতেই চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান,।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, ইয়াংছা মৌজাতে স্কুল হেডম্যান পাড়া সরকারি বিদ্যালয়,বড়পাড়া স্কুল ইয়াংছা এতিম ও হেফজখানা মাদ্রাসার চার পাশে তামাক চাষ কোমলমতি শিশুরা পাঠদানে আসার পথে সব তামাক চাষে বিষ চিটানোর কারনে, অনেক ছাত্র ছাত্রী দের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে এলাকার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মাদ্রাসার হুজুর প্রতিবেদক কে জানান,

স্থানীয়রা জানান, খাস, ব্যক্তিগত, বসতবাড়ির আঙ্গিনা, নদীর দুপাড়, সমতল ভূমি, পাহাড়ি ঢালু জমি ও সরকারি রিজার্ভ এলাকাসহ উপজেলার প্রায় ৮৫ ভাগ জমিতে চাষ করা হয়েছে তামাক। নদীর উপরিভাগে তামাক ক্ষেতে সেচ দিতে বাঁধ দিয়ে নদীর পানির প্রবাহ রোধ করা হয় এবং তামাক পাতাকে পোকা মুক্ত রাখতে যে কীটনাশক ব্যাবহার করা হয় তাতে নদীর পানি দূষিত হওয়ার পাশাপাশি কমছে রবিশস্য উৎপাদনও

প্রতি চাষিকে বিক্রির স্বার্থে একর প্রতি ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে থাকে তামাক কোম্পানিরা। তাদের এ সহজ ঋণের জালে জড়িয়ে অনেকেই তামাক চাষে ঝুঁকছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৪ সাল থেকে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশের হাত ধরে লামা উপজেলায় তামাক চাষ শুরু হয়। পরে একে একে আলফা টোব্যাকো, রাঙ্গুনিয়া টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকো (বর্তমানে ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো), আবুল খায়ের, নিউ এজ টোব্যাকো কোম্পানি ঋণ দেওয়ার মধ্যমে তামাক চাষ শুরু করে। উৎপাদিত তামাক বিক্রয়ের নিশ্চয়তা থাকায় ও অল্প সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পায় তামাক চাষ।

বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এছাড়া এ তামাক শুকানোর জন্য নির্বিচারে বনের কাঠ পুড়ানো হচ্ছে চুল্লিতে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তামাক চাষিরা মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে এক তামাক চাষি ঝুলাশ মিয়া বলেন, ‘তামাক কোম্পানির পক্ষ থেকে তার ৪০ শতক জমিতে তামাক চাষের জন্য ২০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। গত বছর উৎপাদিত তামাক কেজি প্রতি ১৭৯ টাকা হারে কিনেছিল কোম্পানি,।

সাবেক বিলছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মংচাহ্লা মারমা জানায়, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের পাশে তামাক চাষ হয়েছে। ক্লাস চলাকালে সেখানে কীটনাশক ছিটানো হয়, যা খুবই দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ সময় ছাত্র-ছাত্রীদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী তামাক ক্ষেতগুলো সরিয়ে নিলে খুবই ভালো হয়।’

লামা মহামুনি শিশু সদনের শিক্ষক মো. ওসমান গনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে তামাক চাষ না করা উচিত। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। পাশাপাশি তাদের মনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিরও সম্ভাবনা আছে।তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় তামাক চাষ না করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষক বলেন, ‘তামাক গাছগুলো এমনিতেই বিষাক্ত। তার ওপর পোকা দমনে যে রাসায়নিক স্প্রে করা হয় তা বাতাসের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের দেহে প্রবেশ করছে। ফলে শ্বাস কষ্ট ও চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই।’

বিদ্যালয়ের পাশে তামাক ক্ষেতটি তার নয় দাবি করে শিলেরতুয়া মার্মা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রুমং মার্মা বলেন, জমিগুলোতে তামাক চাষ না করতে মালিকদের নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা শোনেনি। পরে উপজেলা প্রশাসনকেও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। তারাও কোনো প্রকার পদক্ষেপ না নেওয়ায় তামাক ক্ষেত সরানো যাচ্ছে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তামাক কোম্পানির লামা ম্যানেজার বলেন, তাদের মনোনীত নির্দ্দিষ্ট কিছু কৃষককে সুদ মুক্ত তামাক দেওয়ার স্বর্থে ঋণ দেওয়া হয়েছে। ঋণ দেওয়া ছাড়াও তামাক চাষের জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক ও পরামর্শ দেওয়া হয় কোম্পানির পক্ষ থেকে।’

তবে কোম্পানির সহায়তাপুষ্ট তামাক চাষির সঙ্গে যোগাযোগ ও পোকা দমনে কি কীটনাশক ব্যবহার করা হয় জানতে চাইলে তথ্য দিতে রাজি হননি। তিনি

লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, উপজেলায় প্রায় ২২ হাজার ৭১০ হেক্টর আবাদি জমি আছে। এর মধ্যে ৬৭৯ হেক্টর জমিতে তামাক আবাদ হয়েছে। তামাক চাষ বন্ধে নির্দ্দিষ্ট সরকারি নীতিমালা না থাকায় চাষিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি প্রণোদনা দিয়েও তামাক চাষ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

লামা উপজেলা কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, তামাক চাষের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ না থাকায় চাষিদের নিষেধ করা যাচ্ছে না। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দ্দেশনা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে চাষিদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

বান্দরবান জেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, জেলায় ১ হাজার ২৪৬.৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এর মধ্যে লামায় ৬৭৯ হেক্টর ও আলীকদমে ৩৫০ হেক্টর। স্কুল ও নদীর উপরিভাগ থেকে ১০০ ফুট দুরত্বে তামাক চাষের পরামর্শ দেওয়া হলেও তা মানছে না কৃষকরা। সরকারি বিধিনিষেধ না থাকায় কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া যাচ্ছে না। তবে তামাক চাষিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রণোদনা ও বিভিন্ন সহযোগিতার মাধ্যমে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

তামাকে পোকা দমনে কি ধরনের কীটনাশক ব্যাবহার করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইমিটা ক্লোরফিট ও ক্লোরোফারিফাস প্রজাতির কীটনাশক,,
অন্য দিকে তামাক গুলো পুড়ানোর সময় একেক চুল্লিতে ব্যাপক হারে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা হয়, কিন্তুু সরকারি রিজার্ভ থেকে গাছ বাগান সাবাড় করে অবৈধ ভাবে কাঠ নিধান করা হয়,
এতে একদিকে ফরেষ্টদের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের পকেট তাজা করে চুরি করে কাঠগুলো সংগ্রহ করে তামাক পুড়ানো হয়, এখন পাহাড়ে গাছ বাগান নেই বললে চলে, দেখার কেউ নেই,।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved ©2022 thedailyagnishikha.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com